সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:০৮ অপরাহ্ন

কারাবন্দিদের মুক্তি এখন হেফাজতের বড় চ্যালেঞ্জ

কারাবন্দিদের মুক্তি এখন হেফাজতের বড় চ্যালেঞ্জ

স্বদেশ ডেস্ক:

কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্ত করাই এখন হেফাজতের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ইমেজ সম্পন্ন নেতা না থাকায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে নেতাদের মুক্তির বিষয়ে বর্তমান কমিটির সক্ষমতা নিয়ে খোদ হেফাজতের ভেতরেই রয়েছে শঙ্কা। সবার মুক্তির বিষয় নিয়ে এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন সংগঠনটির বর্তমান কমিটির নেতারা। তাতে কিছু নেতা জামিনে মুক্তি পেলেও অধিকাংশই রয়েছেন কারাগারে। নতুন আমির নির্বাচিত হলেও এ মুহূর্তে নেতাদের মুক্তির বাইরে হেফাজতের বর্তমান কমিটি অন্যকিছু নিয়ে ভাবছে না বলে জানা গেছে।

হেফাজত সূত্রে জানা যায়, কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে হেফাজতের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেদিকে এখন সংগঠনের সবার দৃষ্টি। সরকারি মহলের সঙ্গে তার বিশেষ যোগাযোগ আছে, এমন কিছু জানা যায় না। কিন্তু হেফাজতের বর্তমান কমিটির কারও কারও সঙ্গে সরকারি মহলের যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত সংগঠনে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর প্রভাব কতটা থাকে, তা নিয়েও অনেকের মনে আছে সংশয়। নতুন আমির হাটহাজারী থাকেন না। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। এই দূরত্ব সংগঠনেও দূরত্ব তৈরি করে কিনা, সেটিই সংশয়ের কারণ। দারুল উলুম মঈনুল ইসলামকে (হাটহাজারী মাদ্রাসা) প্রধান করে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠা হয়। এর আগে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফী এবং পরবর্তী আমির জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসা মহাপরিচালক ও শিক্ষা পরিচালক ছিলেন।

হেফাজতের কয়েক নেতা বলেন, হুজুররা আস্তে আস্তে তো জামিন পাচ্ছেন, একজন একজন করে বের হচ্ছেন। সমঝোতা বা সুরাহার পথ তো দেখা যাচ্ছে। জমিয়ত ২০-দলীয় জোট ছাড়ল, সে মোতাবেক তাদের তিনজন ছাড়া সবাই মুক্তি পেয়ে গেছে। তবে দলীয় আলেমরা জামিন পাননি, পাশাপাশি নির্দলীয় ইসলামিক বক্তারাও জামিন পাননি। তিনি বলেন, হেফাজতের বর্তমান আমির ও মহাসচিব কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করার পূর্বেকার আমির ও মহাসচিবের মতো ইমেজ নেই। পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে দাবি-দাওয়া আদায়ের সক্ষমতাও নেই তাদের। তারা শুধু নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। তারা মূলত সরকারের পরামর্শেই চলেন। হেফাজতে এখন যারা আছেন, তাদের অনেকের নেতৃত্বে আসার মতো আগ্রহও নেই, কিন্তু কর্তৃপক্ষ চায় বলে আসেন।

সূত্রমতে, ধর্মীয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার নীতি-আদর্শের কিছু কিছু বিষয়ে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর অবস্থান কট্টর বলে জানান তার ঘনিষ্ঠজনরা। তারা জানান, একসময় তিনি মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি মুফতি আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটে যুক্ত হন, তবে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে থাকতেন না। আমিনীর মৃত্যুর পর ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে সরকারের দিকে ঝুঁকলে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী দল থেকে পদত্যাগ করেন। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর ঘনিষ্ঠতায় অসন্তোষ জানিয়ে তিনি একবার হেফাজত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পর অনেক দিন চুপ ছিলেন।

জানা গেছে, এক হাজারের বেশি হেফাজতের নেতাকর্মী কারাবন্দি রয়েছেন। জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মাত্র ৪০-৪৫ জন। সংগঠনের এক সিনিয়র নেতা বলেন, নতুন আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী রাজনৈতিক সংশ্লেষহীন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ আলেম। তার বয়স ৯০-এর ঊর্ধ্বে। নিজের মাদ্রাসা, সেখানকার পড়াশোনা এবং ধর্মীয় বিষয় ছাড়া অন্য কিছুতে বিশেষ আগ্রহ নেই হেফাজতের এই শীর্ষ নেতার। তাকে নিয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো বিতর্ক নেই। তাই হেফাজতের নেতারা মনে করেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলবে।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী আমাদের সময়কে বলেন, হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর রাতেই আমরা হাটহাজারী মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে বসে নতুন আমির হিসেবে আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নাম ঘোষণা করেছি। এ মুহূর্তে কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে ভাবছি না। নতুন আমিরের নেতৃতে হেফাজতে ইসলাম ঐক্যবদ্ধভাবে সব সংকট মোকাবিলা করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877